সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

এবার সাবধান হওয়ার পালা


এবার সাবধান হওয়ার পালা



প্রেমের ফাঁদ পেতে পর্নোগ্রাফি ধারণ করে ইন্টারনেটে ছাড়ছে দুর্বৃত্তরাছড়িয়ে পড়ছে মোবাইল থেকে মোবাইলেএমনকি কারো গোপন দৃশ্য চলে যাচ্ছে পর্ণো-ভিডিও ব্যবসায়ীদের হাতেনারীরা শিকার হচ্ছে সন্ত্রাস, অপরাধ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়েরহাল সময়ে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে এ ধরনের অপরাধ পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করছে সরকারএটা কতটা কার্যকর হবে? লিখেছেন জিনাত রিপা ও আরাফাত শাহরিয়ার
ঘটনা ১
স্কুলের গেটের সামনে থেকে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায় পাঁচ-ছয়জন যুবকনিয়ে যাওয়া হয় মহাখালীর একটি আবাসিক হোটেলেগণধর্ষণ করে সে দৃশ্য ধারণ করে ক্যামেরায়রাত ১২টায় মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে বলা হয়, এ কথা কাউকে বললে ভিডিও বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবেমেয়েটি কথা রাখলেও নরপশুরা ওই ভিডিও ছেড়ে দেয় ইন্টারনেটেতা ছড়িয়ে পড়ে মোবাইল ফোনেও ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর গেল বছরের এপ্রিলে অভিযুক্তদের একজন আতিকুল ইসলাম ইমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ

ঘটনা ২
মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল অভি মিয়া একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে মেয়েটি এ প্রস্তাবে মিথ্যা সায় দেয়একদিন সুযোগ বুঝে মেয়েটিকে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় অভিজোর করে আপত্তিকর কিছু ছবি তোলেপরে বিয়ের কথা বলে মেয়েটির অনিচ্ছা সত্ত্বেও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেএই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে অভির এক সহযোগীমেয়েটি বিয়ের কথা বললে বেঁকে বসে অভিউল্টো আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়পরে তা করেও২০১১ সালের জুলাই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ঘটে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ এবং ইন্টারনেটে ছবি ও ভিডিওচিত্র ছাড়ার এ ঘটনা

ঘটনা ৩
তাজুলের সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় স্কুলে যাওয়া-আসার পথেএকসময় দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্কগত ২৫ মার্চ সকালে বিয়ে করার কথা বলে প্রাইভেট কারে করে মেয়েটিকে অজ্ঞাত একটি বাড়িতে নিয়ে যায় তাজুলকোমল পানীয়ের সঙ্গে উত্তেজক পদার্থ খাইয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেএ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাইভেট কার থেকে মেয়েটিকে মাঝপথে নামিয়ে দেয় তাজুলমাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তাজুল এ ঘটনার দুই মাস পর মোবাইলে ধারণ করা ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন মোবাইলে ঘটনাটি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার

নতুন আইন, নতুন স্বপ্ন
দেশে প্রতিনিয়ত মেয়েরা শিকার হচ্ছে এ ভয়াল ব্যাধিরপ্রায়ই এমনটি ঘটলেও অনেক ঘটনাই থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালেবখাটেরা ভিডিও বা স্থিরচিত্রের ভয় দেখিয়ে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে ঘটনার শিকার নারীদেরলজ্জা ও ভয়ে মুখ খুলতে পারে না মেয়েরাএত দিন যে আইন ছিল, তা একেবারেই দুর্বল, যার ফাঁক গলে খুব সহজেই বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল অপরাধীদেরতাই অহরহ এ অপরাধ ঘটলেও ছিল না এ আইনের চল
সম্প্রতি এ সামাজিক অপরাধ বন্ধে সব ধরনের পর্নোগ্রাফি উপাদন এবং সরবরাহ নিষিদ্ধ করে সরকার প্রণয়ন করেছে একটি নতুন আইনইতিমধ্যে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদনও করেছে মন্ত্রিসভা২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়আইন অমান্য করলে সবর্োচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান
রাখা হয়েছে
আইনজ্ঞ বলেন :
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালের যে আইনটা ছিল, সেটার ব্যবহার ছিল নাপ্রথম কেস আমরাই করেছি, সেটাও আবার কয়েক মাস আগেচেক করতে গিয়ে দেখেছি, আইনটা খুবই দুর্বলউপলব্ধি করেছি, এটার পরিবর্তন দরকারআমরা বলেছি, একটি সুনির্দিষ্ট আইন চাই এবং আমাদের কাছে অনেক কেস আসছেলজ্জায়, লোকভয়ে অনেকে অভিযোগ করছে পারছে না, শক্তিশালী ও সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় আমরা সেভাবে সাপোর্টও দিতে পারছি নাঅনেক অল্পবয়সী মেয়েও ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার হচ্ছেএকটা মেয়ে হয়তো দেশের বাইরে থাকে, সেও রেহাই পাচ্ছে নাআমি একজন প্রিটিশনার, অনেক বছর ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিঅনেক কেস করেছিএর আগে মানবপাচার আইন, অ্যান্টিভায়োলেন্ট ', অন্যান্য আইন প্রণয়নের সময় আমরা সরাসরি সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম ড্রাফট করে দিয়েছি, নিজেরা কোর-কমিটিতে ছিলামকিন্তু দুঃখের বিষয়, আইনটা নিয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনিএর আগে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও আমরা পারিনিপাস হওয়ার পর আমরা কিন্তু খসড়া আইনও পাইনিএখন এটি পার্লামেন্টে যাবেআমাদের কাছে অবাক লাগছে, সরকার কেন আমাদের অ্যাকসেস দেয়নিওয়েবসাইটে নেই, হোম মিনিস্ট্রি, ইনফরমেশন মিনিস্ট্রি ও অন্যান্য মিনিস্টিতে চেয়েও আমরা এটি পাইনিএটা কিন্তু আমাদের কাছে খুবই সন্দেহজনক এর মধ্যে হয়তো এমন কোনো বিষয় আছে, যা বাস্তবায়ন করতে সমস্যা হবে অথবা এর অপব্যবহারও হতে পারেআলোচনা সাপেক্ষে যদি হতো, আইনের দুর্বল বিষয়গুলোও উঠে আসতআইনে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেইআমি মনে করি, এটা যথেষ্টবাস্তবায়ন করাই; কিন্তু প্রতিটা আইনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জআইন প্রয়োগের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে যে ভূমিকাটা আছে, তা কার্যকর হবে কি না দেখার বিষয় ভিকটিমের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়গুলো দেখতে হবেনিশ্চিত করতে হবে জবাবদিহিতার বিষয়টিও

আইনের প্রয়োগ হবে তো?
বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনেআইনের অধীনে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর বা সমমানের কর্মকর্তা পর্নোগ্রাফি ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করবেনতাঁরা অভিযুক্তদের সঙ্গে সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করবেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন মনে করেন, আলোচিত কোনো ঘটনার বিচার করে আইনটির দ্রুত প্রয়োগ করতে হবে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবেতিনি বলেন, 'অতীতে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে, তা এ আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবেএতে সবাই শাস্তির কথাটি জেনে যাবেআর এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাহসী ভূমিকা নিতে হবেনা হলে এটি আইন হিসেবেই
থেকে যাবে'
আইনয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা যথাযথ না হলে এ দোষীরা ধরা পড়বে না, ভিকটিম পরিবার পড়বে উল্টো হুমকির মুখেতাই সবার আগে ভিকটিমের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবেএমনটিই মনে করেন একটি বেসরকারি সংস্থার উন্নয়নকর্মী জিহাদ বিন শামস

কে কী বলেন
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাতিন হাসান মনে করেন, এ বিষয়ে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছেতিনি বলেন, 'টেলিভিশন ও অন্যান্য জাতীয় প্রচারমাধ্যমে নতুন প্রণীত আইন ও শাস্তির বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবেএ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে'
কেউ যেন আইনের অপব্যবহারের সুযোগ না পায়, মাথায় রাখতে হবে সে বিষয়টিওপ্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম
সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ, জয়িতা । তারিখ : ২৪-০১-২০১২ইং

শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১২

বাল্যবিবাহ

  বাল্যবিবাহ
বাল্যবিবাহ কী?
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সাথে ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়েকেই বাল্যবিবাহ বলা হয়। ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বাল্যবিবাহ বলতে বোঝায়, বাল্যকাল বা নাবালক বয়সে ছেলে মেয়েদের মধ্যে বিয়ে। এছাড়া বর-কনে দুজনেরই বা একজনের বয়স বিয়ের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের কম হলে অর্থাৎ বিয়েতে মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে অথবা ছেলের বয়স ২১ বছরের নিচে থাকলে সেটাও আইনের চোখে বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত হবে। ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী-
·    বাল্যবিবাহ আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ
·    শিশু বিবাহকারী পুরুষ, বিবাহ রেজিস্ট্রেশনকারী কাজী, পিতা-মাতা, অভিভাবকসহ বাল্যবিবাহের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ এই বিয়ের সাথে যুক্ত সকলেই শাস্তি পাবেন
·    বাল্য বিবাহ একটি বাতিলযোগ্য বিবাহ

বাল্যবিবাহের কারণ:
১। পিতা-মাতার অজ্ঞতা ।
২। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ।
৩। যৌতুকের নির্মতা ।
৪। আর্থিক স্বল্পতা ও লোভ ।
৫। অতি অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েদের যৌবন প্রাপ্ততা ।
৬। নারী সমাজকে হীন চোখে দেখা ।
৭। অশ্লীল সংস্কৃতি ।
৮। সরকারের আন্তরিকতার অভাব ও ব্যর্থতা ।
১। পিতামাতার অজ্ঞতা: কথায় আছে “নির্বোধ বন্ধু অপেক্ষা জ্ঞানী শত্রু অনেক শ্রেয়” ।অর্থাৎ অশিক্ষিত বন্ধুর চেয়ে শিক্ষিত শত্রু অনেক উত্তম । বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ ।এজন্যে পিতা-মাতারা অধিক পরিমানে সন্তান জন্মদান করেন ।তারা ভাবেন, বেশি সন্তান থাকলে কৃষি খরচ(লেবারের মজুরী) কমে যাবে ।কৃষি কাজ করার জন্য তারা তাদের সন্তানকে স্কুলেও পাঠাতে আগ্রহী হন না ।তারা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সংসারী করার জন্য অতি অল্প বয়সে বিয়ে করান ।বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে তারা ভাবেন ঘরে মেয়ে বেশি দিন থাকলে সংসারের অযথা খরচ(খাওয়া, পোশাক, বাসস্থান ইত্যাদি খরচ) বৃদ্ধি পাবে । তাই তারা তাদের মেয়েকে পরের ঘরে বিদায় করে খরচ লাঘব(কমাতে) করতে চান ।
২। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি: অশিক্ষিত সমাজ ভাবে যুবক-যুবতী ঘরে রাখা পাপ ।আরও ভাবে যৌবন প্রাপ্ত ছেলে-মেয়েরা সমাজে থাকলে অসামাজিক কাজে যুক্ত হবে ।তাই এই সমাজ যুবক-যুবতীকে ঘরে রাখাকে তিরষ্কার প্রদান করে ।আবার সমাজের রীতি-নীতি না মানলেও অনেক পরিবারকে একঘরে হয়েও থাকতে হয় অনেক সময় ।
৩। যৌতুকের নির্মমতা: আজকের দিনে যৌতুক ছাড়া একটি মেয়ের বিয়ে দেওয়া কল্পনাই করা যায় না ।ঘরে মেয়ে যতই বড় হয় ততই যৌতুকের হার বৃদ্ধি পেতে থাকে ।তাই বাবা-মায়েরা অল্প বয়সে স্বল্প যৌতুকে মেয়েকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দায় সাড়াতে চান ।
৪। আর্থিক স্বল্পতা ও লোভ: অভাবী ছেলের বাবা-মায়েরা চান ছেলেকে বিয়ে করিয়ে মোটা অংকের যৌতুক(নগদ টাকা, গহনা, দামী জিনিস পত্র, গাড়ী ইত্যাদি) সহ ঘরে পুত্র বধু আনতে ।(প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন বিয়েটা কাকে করা হচ্ছে, মেয়েকে ? না সম্পদকে ?) এছাড়া অভাবে বা টাকা বাচানোর জন্যে বাবা-মাযেরা কচি (৮-১১বছর) বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে থাকেন ।
৫। অতি অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েদের যৌবন প্রাপ্ততা: এদেশের ছেলে-মেয়েরা অতি অল্প বয়সে যৌবন প্রাপ্ত হয় ।এর পিছনে কিছু লক্ষণীয় কারণ আছে ।
কারণ গুলো হল:
 ১। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল ।
 ২। বেশি পরিমানে শাক-সবজি খাওয়া ।
অল্প বয়সে যৌবন প্রাপ্ত হওয়ায় অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা নিজেদেরকে যৌবনের হাত থেকে সামলাইতে পারে না ।শুধু যৌবণের নেশায় বিভোর হয়ে থাকে ।এ কারণে বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েকে তড়ি-ঘড়ি করে বিয়ে করান ।বাবা-মায়েদের মাঝে একটিই আতংক কাজ করে যে, কখন কোন অঘটন ঘটে যায় ।বাবা-মায়েরা বিয়ে করাতে না চাইলেও কিছু ছেলে-মেয়েরা যৌবণের তাগিদে পালিয়ে বিয়ে করে থাকেন ।
৬। নারী সমাজকে হীন চোখে দেখা: সারা বিশ্বে নারী-সমাজকে হীন চোখে দৃষ্টিপাত এবং তাদেরকে অবহেলা করা হয় ।দুঃখজনক একটা বিষয় না বললেই নয় যে, আমাদের মাঝে কিছু ধর্মীয় পুরাহিত(ধর্মীয় সাধক) আছেন যারা ধর্মীয় আদেশের ভুল ব্যাখ্যা করে করে নারী সমাজকে অবজ্ঞায় পতিত রাখেন ।এর দরুণ নারী সমাজকে অতি উচ্চ মূল্য গুনতে হচ্ছে ।বাবা-মায়েরা ভাবেন মেয়েদের পড়াশুনার প্রয়োজন নাই, মেয়েরা তাদের সংসারের কোন উন্নয়নে অংশগ্রহন করতে পারবে না ।পারেনা কোন চাকরি করিয়া অর্থ উপার্জন করতে ।এজন্যে বাবা-মায়েরা চান যত তারা-তাড়ি সম্ভব ধর্মীয় বিধিমালা অনুযায়ী মেয়েকে শ্বশুর বাড়ীতে বিদায় করে দায় সারাতে ।এতে বাল্যবিবাহের হার বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
৭। অশ্লীল সংস্কৃতি: আজকাল টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টাতেই চোখে পড়ে অশ্লীল দৃশ্য ।ইন্টারনেট ব্লাউজিং করতেই চোখে পড়ে অশ্লীল ছবি, গান ও গল্পের ভাণ্ডার ।যেটা শিক্ষার একটি অংশ সেখানেই অশ্লীলতা ।তাহলে এটি কী নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করবে? রাস্তা-ঘাটে (বিশেষ করে পার্কে, রাস্তার ধারে, বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে, মেলা-প্রদর্শনীতে) যে দৃশ্যমান ছবিটি চোখে পড়ে তা হল, ছোট-খাটো পোশাক পরিধান রত ঝলমলে উড়ন্ত লাগাম বিহীন প্রজাপতির মত উড়ে বেড়ানো একদল তরুণীকে ।এতে দৃষ্টি ভ্রষ্ট হয়ে যুবকরা নিজেদের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে ।বাবা-মায়েরা চান তাড়া-তাড়ি ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে ধর্মীয়-সামাজিক দায় তথাপী পাপ এড়াতে ।
৮। সরকারের আন্তরিকতার অভাব ও ব্যর্থতা: সন্মানিত পাঠক, এখানে অবাক হবার কিছুই নেই যা সচারচর ঘটে থাকে তা হল একটি বাল্যবিবাহ আয়জনের অপরাধে পিতা-মাতাকে গুনতে হয় মাত্র ১০০০(এক হাজার) টাকা । এছাড়া বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সরকারের তেমন উল্লেখ যোগ্য আইন বা প্রতিরোধ ব্যবস্হা নেই । কিছু আইন থাকলেও তার বাস্তবায়নে উদ্দেক নেই । দেশের প্রতি গ্রামেই অহরহ বাল্যবিবাহ ঘটছে, তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রশাসনিক তেমন কোন সু-ব্যবস্থা নেই এবং দেখার কেউ নেই ।চলছে শুধু স্লোগান আর ক্ষমতাসীনদের চটকুদার কথা ।
বাল্যবিবাহের উৎপত্তি: এখনো বাল্যবিবাহের উৎপত্তির ইতিহাস সঠিক ভাবে জানা সম্ভব হয়নি ।বিভিন্ন দিক থেকে অনুমান করা যায় যে, পৃথিবীর আদিকাল হতেই বাল্যবিবাহের মত একধরনের সেক্সুয়াল নিয়ম চালু হয়ে আসছিল ।সেই নিয়মেরই ধারা বাল্যবিবাহ বলে ধারণা করা হচ্ছে ।সে কালে চিকিৎসা-বিজ্ঞান বলতে কিছু ছিলনা বলে বাল্যবিবাহের বিষয়টি তেমন আলোকিত হয়নি ।আধুনিক কালে চিকিৎসা-বিজ্ঞান উন্নতি হওয়ায় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে গন-সচেতনতা গড়ে উঠছে ।
***প্রিয় পাঠক, আজ এই টুকুই আগামী দিনে এর বাকী যোগ করব (ইনশা আল্লাহ) । আমাদের সাথেই থাকুন এবং দোয়া রাখবেন ।কোন ভুল-ভ্রান্তি থাকলে আমাদের জানাবেন ।***